বিমা করলে মিলবে বোনাস। মেয়াদ শেষে দেয়া হবে দ্বিগুণ লাভ। ছিল এমন নানান আশ্বাস। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩-৪ বছর কেটে গেলেও এখনো আমানত ফেরত পাননি গ্রাহকরা। ভোলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমন কাণ্ডে হতাশ দুই হাজার গ্রাহক। প্রতিদিনই বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে বিমা কোম্পানির জেলা ও উপজেলা অফিসে ছুটে আসছেন গ্রাহকরা। কিন্তু টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বাড়িতে। কষ্টের বিমার টাকা ফেরত না পেয়ে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী। কারও কারও আবার দীর্ঘদিনের সংসার ভাঙনের পথে। এমন অবস্থায় চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন গ্রাহকরা।
ভোলা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির জেলা অফিসে কথা হয় ওই বিমা কোম্পানির এভিপি, অপারেশন ইনচার্জ কামরুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ভোলার সাত উপজেলায় বিভিন্ন পলিসি ও বিভিন্ন মেয়াদে বর্তমানে গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এদের মধ্যে সাত উপজেলাতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ও মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগে ভেঙে ফেলেও বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা দুই হাজার ২৪৪ জন। তিনি আরও জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রাহকের সংখ্যা বেশি হলেও তাদের কোম্পানিতে টাকার সংকট রয়েছে। এ কারণে গ্রাহকদের বিমার টাকা দিতে গিয়ে তারা সমস্যায় পড়েছেন। তবে মাঠ থেকে বিমার প্রিমিয়াম কালেকশন করে প্রতিদিন কিছু কিছু গ্রাহককে টাকা দেয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরের পর তাদের এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশা করেন কামরুল হাসান। ভোলার শহরের গাজীপুর রোড এলাকার বেবী আক্তার ও তার স্বামী কাজল ইসলাম জানান, তারা ২০১১ সালের শেষের দিকে বার্ষিক ১১ হাজার ৯৯০ টাকা করে একটি ১০ বছর মেয়াদি বিমা করেন। বিমার মেয়াদ ২০২২ সালের দিকে শেষ হলেও তারা এখনো টাকা পাননি। বোরহানউদ্দিন উপজেলার উদয়পুর গ্রামের ব্যাপারী বাড়ির বাসিন্দা মাইনুর বেগম। তিনি জানান, তার স্বামী কৃষিকাজ করে অনেক কষ্টে সংসার পরিচালনা করেন। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ১০ বছর মেয়াদে একটি বিমা করেন। কিন্তু বিমার মেয়াদ শেষ হলেও মেয়ের বিয়ের সময় টাকা পাননি। পরে বাধ্য হয়ে আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মাইনুর বেগম আরও জানান, টাকার জন্য তার স্বামী কয়েকবার তাকে মারধর করেছেন। ঘর থেকে বের করেও দিয়েছেন। বিমার টাকাকে কেন্দ্র করে সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। একই বাড়ির আফরোজা বেগম জানান, তিনিও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিমা করেছেন। তবে মেয়াদ শেষ হলেও এখনো টাকা ফেরত পাননি। বিমার টাকা না পাওয়ার কারণে তার ছেলে ও ছেলে বউরা তাকে নানানভাবে কথা শোনান। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছে। একই উপজেলার কুতুবা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাহার আক্তার। তিনি জানান, দুটি বিমা করেছেন। তবে মেয়াদ শেষ হলেও এখনো টাকা ফেরত পাননি তিনি। স্বামীকে না জানিয়ে বিমা করায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেয়াদ শেষেও মিলছে না বিমার টাকা, হতাশ দুই হাজার গ্রাহক, বোরহানউদ্দিন পৌর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহিদা বেগম জানান, তার স্বামীর নিষেধের পরও তিনি দুটি বিমা করেন। একটিতে এক লাখ ১০ হাজার ও আরেকটিতে ২৪ হাজার টাকা জমা হয়েছে। কিন্তু মেয়াদ শেষেও টাকা ফেরত পাননি। এজন্য তার স্বামী তাকে গালমন্দ করে প্রায় দেড় বছর ধরে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সন্তানদের নিয়ে কষ্ট রয়েছেন। এ বিষয়ে ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক জানান, বিষয়টি তারা লোকমুখে শুনলেও এখনো কোনো গ্রাহক লিখিতভাবে অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স
মেয়াদ শেষেও মিলছে না বিমার টাকা হতাশ গ্রাহক
- আপলোড সময় : ১৫-১০-২০২৪ ০২:২৪:৪২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-১০-২০২৪ ০২:২৪:৪২ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ